অনন্য গর্ব ও অহংকারের একটি নাম : জিয়াউর রহমান👮
টাইগার বলতে এখন আমরা আমাদের ক্রিকেটারদের বুঝি, কিন্তু উনার সময়ে যুদ্ধের ময়দানে শত্রুপক্ষকে টাইগার শব্দটি বললেই উনার ছবি বা চেহারা শত্রুর সামনে ভেষে উঠতো। উনার জেড ফোর্সকে ওইসময় টাইগার ফোর্স নামে ডাকা হতো। উনি সেই টাইগার ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন।
তার জীবনে তিনি যুদ্ধ করেছেন ২ দেশের বিরুদ্ধে ২ দেশের যোদ্ধা, ২ যুদ্ধেই তিনি বিজয়ী হয়ে ফিরেছেন বীরের বেশে। ২ যুদ্ধেই তার বীরত্বের জন্য তার দেশের সরকার সর্বোচ্চ জীবিত বীরের সম্মাননা তাকে প্রদান করে, যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। পাক-ভারত যুদ্ধে (১৯৬৫) তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে যুদ্ধ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে সেইসময় পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহর করাচীকে রক্ষা করেছিলেন তিনি, যার জন্য তার বীরত্বের সম্মাননা স্বরূপ পাকিস্তান সরকার তাকে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব হেলাল-ই-জুরাত উপাধি দিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধে (১৯৭১) সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে অসামান্য কৃতিত্ব ও বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধি দিয়েছে।
এই মহানায়কের জীবনী এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়, তবু্ও আজ শুধু তার ১৯৭১ এর যুদ্ধ এবং পরবর্তী রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে কিছু লিখবো। ইতিহাসের রেফারেন্স হিসেবে কিছু বই ও লেখকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে সবার বুঝার জন্য।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন মেজর। সে রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাসরত পাকিস্তানি এক জেনারেলের কাছে তাঁকে পাঠানো হচ্ছিল। পরিকল্পনা ছিল তাঁকে ‘গ্রেপ্তার বা হত্যা’ করার (গোলাম মুরশিদ-মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস)। পথিমধ্যে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সংবাদ শোনামাত্র বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরে এসে তাঁর কমান্ডিং অফিসারকে হত্যাসহ অন্যান্য পাকিস্তানি অফিসার ও সৈন্যকে বন্দী করেন। পরদিন তিনি প্রাণভয়ে পলায়নপর মানুষকে থামিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্দীপনাময় ভাষণ দিতে শুরু করেন (বেলাল মোহাম্মদ-স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র)। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি বেতারে নিজ কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
জিয়ার এই রূপান্তর বা উত্থান বিস্ময়কর হতে পারে, কিন্তু তা আকস্মিক ছিল না। বরং বাংলাদেশের মানুষের বঞ্চনা, স্বাধীনতার স্বপ্ন, একজন সৈনিককেও কীভাবে উদ্দীপিত করেছিল, এটি ছিল তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত (প্রফেসর জিয়াউর রহমান-‘একটি জাতির জন্ম’)। জিয়া ছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন অগ্রগণ্য সেনানায়ক। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের একজন ছিলেন। ৪৯ জন যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাকে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার সর্বোচ্চ বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। তিনি তাঁদের একজন ছিলেন। কিন্তু তিনি সেক্টর কমান্ডার ও বীর উত্তম খেতাবধারীদের মধ্যেও অনন্য ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে। ২৭ মার্চ এই ঘোষণা ‘মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ পক্ষে তিনি প্রদান করেন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে।
এরপর জিয়া চট্টগ্রাম যুদ্ধাঞ্চল, ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে বহু আলোচিত যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন। যুদ্ধের শেষ ভাগে সিলেট অঞ্চলে তাঁর বাহিনীর কাছেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধে তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম শক্তিশালী প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে, কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। তাঁর আগে মাওলানা ভাসানী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছাত্রনেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের স্লোগান দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, এ জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি ২৫ মার্চ কালরাতের পর জিয়ার আগেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কারণে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার তাৎপর্য ছিল অন্য রকম।
প্রথমত, শক্তিশালী সম্প্রচারকেন্দ্রে বারবার সম্প্রচারিত হওয়ার ফলে জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাটিই কেবল দেশের সব অঞ্চল থেকে বহু মানুষ শুনতে পেয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণের মুখে দিশেহারা ও পলায়নপর অবস্থায় এটি মানুষের কাছে পরম ভরসার বাণী হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, জিয়ার ঘোষণাটি ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন বিদ্রোহী বাঙালি অফিসারের। এটি মানুষকে প্রতিরোধের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রবলভাবে আশান্বিতও করেছিল।
মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এ কে খন্দকার ২০০২ সালে এক স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি, যুদ্ধের পরবর্তী সময়েও জানি যে মেজর জিয়ার এই ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারা দেশের ভেতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে হ্যাঁ, এইবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামল।’ (এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জা-মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন)। জিয়ার ঘোষণায় উৎসাহিত বা উদ্দীপিত হয়েছিলেন কোটি কোটি মুক্তিযোদ্ধা এবং তাজউদ্দীন আহমদ নিজেও। (ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি), (এইচ টি ইমাম -বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১), (অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের -আমার একাত্তর)এর মতো বইয়ে তা উল্লেখ আছে সাক্ষী আছে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও। তাঁর ঘোষণার গুরুত্বের উল্লেখ আছে মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের সক্রিয় কূটনীতিক জে এন দীক্ষিতসহ ট্রেভর ফিসলক, ডেভিড লুডেনের মতো বহু আন্তর্জাতিক ব্যক্তির ভাষ্যে (মাহফুজ উল্লাহ-প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ)।
তবে মনে রাখতে হবে, জিয়ার ঘোষণাটির অতুলনীয় প্রভাব পড়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে এটি দেওয়া হয়েছিল বলে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক মঈদুল হাসান লিখেছেন, ‘মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার বক্তৃতায় (২৭ মার্চ সন্ধ্যা) নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করলেও পরদিন ভারতে থাকা আওয়ামী নেতাদের সাথে তার যোগাযোগ হয়, এটা যেন পাকিস্তান সরকার ক্যু হিসেবে না দেখাতে পারে তাই তিনি শেখ মুজিবের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন। এই ঘোষণা লোকের মুখে মুখে বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়ে, সবাই ভাবতে শুরু করে শেখ মুজিবের পক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালিরা স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই শুরু করেছে।’ (মূলধারা ’৭১)
১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালি অফিসারদের কাছে কোনো সুস্পষ্ট বা সরাসরি নির্দেশ ছিল না। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী নেতা শেখ মুজিবের কাছে পাকিস্তানের শাসনভার প্রদানে অনীহার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা সচেতন ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীতে তাঁদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা নিয়েও প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল (রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে)। এ কারণে তাঁদের অনেকেই ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার সংবাদ শোনামাত্র বিদ্রোহ করেন। বাঙালি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে জিয়া বিদ্রোহ করেন সবার আগে (মুরশিদ-পূর্বোক্ত)। ২৮ মার্চের মধ্যে বিদ্রোহ করেন সেক্টর কমান্ডারদের প্রায় সবাই। কিন্তু তাঁদের বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহকে সমন্বিত, সুশৃঙ্খল ও কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা এবং এটিকে পরিপূর্ণ একটি স্বাধীনতাযুদ্ধে পরিণত করার ব্যাপারে জিয়াসহ প্রত্যেকে সচেতন ছিলেন। যুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় তাঁদের এই অসাধারণ প্রজ্ঞা, দায়িত্ববোধ ও রণকৌশলের পরিচয় পাওয়া। এবং এখানেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমরা জিয়াকে অনন্য বা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে দেখি।
প্রথমত, ৩ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার ঠিক পরদিন জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, কে এম সফি উল্লাহসহ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী ইউনিটগুলোর কমান্ডাররা তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা ভারতের সামরিক সাহায্য এবং দেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ে স্বাধীন সরকার গঠনের আবশ্যকতা প্রশ্নে একমত হন, বিদ্রোহী ইউনিটগুলো নিয়ে সম্মিলিত মুক্তিফৌজ গঠন করেন এবং এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে স্থির করেন। ৪ এপ্রিলের এই বৈঠকই ছিল বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রথম সাংগঠনিক ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ সরঞ্জামের অভাব, কেন্দ্রীয় কমান্ডের নিষ্ক্রিয়তা এবং কূটনৈতিক স্বীকৃতি দানে ভারতের বিলম্বের কারণে একাত্তরের মে থেকে জুলাই মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত হতোদ্যম পরিস্থিতিতে যুদ্ধাঞ্চলের অধিনায়কদের এক সম্মেলনে জিয়াই নতুন চিন্তা নিয়ে আসেন। ১০ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এর সূচনায় মুক্তিযুদ্ধের অধোগতি রোধ ও যৌথ কমান্ড-ব্যবস্থায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুদ্ধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেন জিয়া। তাঁর এই প্রস্তাবে একজন বাদে বাকি সব সেক্টর কমান্ডারের সম্মতি ছিল। মন্ত্রিসভার সমর্থন থাকলে এটি যুক্তিসংগত বলে মেনে নিতে পারতেন তাজউদ্দীন। তাতে যুদ্ধ আরও গতিশীল হতে পারত (এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জা, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন)। তবে সেই সম্মেলনে গেরিলাযুদ্ধের পাশাপাশি সম্মুখসমর, মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যৎ সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তুতি হিসেবে ব্রিগেড গঠনের যে সিদ্ধান্ত হয়, তা রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকেই।
তৃতীয়ত, জুলাই মাসের এই সম্মেলনে জিয়ার নেতৃত্বাধীন ব্রিগেড গঠনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হলেও পরে কর্নেল ওসমানীর একক সিদ্ধান্তে আরও দুটি ফোর্স গঠিত হয় (এ কে খন্দকার, পূর্বোক্ত)। জেড ফোর্স নামে পরিচিত জিয়ার ব্রিগেড একাত্তরে দ্রুত কাজ শুরু করে। ঢাকামুখী অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি বাহিনীর কামালপুর ঘাঁটিতে তারা ৩১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট কয়েক দফা হামলা চালায়। ১ আগস্ট জেড ফোর্স বাহাদুরবাদ এবং ৩ আগস্ট শেরপুরে নকশি বিওপিতে আক্রমণ করে। এসব দুঃসাহসিক সম্মুখসমরে অনেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। কামালপুর যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হন। জিয়াকে এ জন্য কিছু সমালোচনাও মেনে নিতে হয়। কিন্তু এসব যুদ্ধ মুক্তিবাহিনীর সামর্থ্য ও সাহসিকতা সম্পর্কে নতুন উপলব্ধির জন্ম দেয়।
চতুর্থত, মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে জিয়াকে আমরা দেখতে পাই সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণাত্মক যুদ্ধের অধিনায়ক হিসেবে। একাত্তরের অক্টোবরে যৌথ সামরিক নেতৃত্ব গঠনের পর যুদ্ধের নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব চলে যায় ভারতের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে। নভেম্বরে ভারতীয় বাহিনী নিজ দেশের সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাংলাদেশের সেক্টর ও ফোর্সগুলো আরও মুহুর্মুহু আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ওসমানীর নিদের্শ অক্টোবর মাসে পুরো জেড ফোর্স নিয়ে মেজর জিয়া চলে আসেন সিলেটে। এর তিনটি ব্যাটালিয়ন শ্রীমঙ্গল, ছাতক ও কুলাউড়ায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা ও ক্যাম্পে সরাসরি হামলা চালায়। ১০ ডিসেম্বর এই ফোর্স সিলেট আক্রমণ শুরু করে। ১৪ তারিখ তারা সিলেটে প্রবেশ করে। যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তিনি একদিন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, সিলেটে ১২৫ জন অফিসার, ৭০০ সৈন্যসহ সেই বাহিনীর একটি অংশ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান ছিল অপরিসীম। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করা ছাড়াও যুদ্ধ পরিচালনা ও যুদ্ধ প্রশাসনের নীতিনির্ধারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। জিয়া ছিলেন এই যুদ্ধে মহানায়কের মতো। আরও ছিলেন খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের, আবু ওসমান, এম এ জলিল, রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি ছিল একটি জনযুদ্ধ, বহু সাধারণ মানুষের অসাধারণ আত্মত্যাগ আর শৌর্য–বীর্যের এক অনুপম গৌরবগাথা।
বাংলাদেশের এই বীর সন্তানেরা ছিলেন অত্যুজ্জ্বল এক নক্ষত্রমণ্ডলীর মতো। সে নক্ষত্রমণ্ডলীর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শুধু জিয়া নন, আরও অনেকেরই কর্মকাণ্ড নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা আলোচনা রয়েছে। কিন্তু সেটি তাঁদের একাত্তরের ভূমিকাকে ম্লান করতে পারে না।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মোটাদাগে বড় অভিযোগ দুইটি। স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতির সুযোগ দেওয়া এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা। এসব অভিযোগ ও সমালোচনা থাকার পরও দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এক শাসক তিনি। বিএনপিও অন্যতম প্রধান দল। দলটির তেমন সাংগঠনিক দক্ষতা ও শক্তি বর্তমানে নেই। কিন্তু নানা জুলুম, নির্যাতন ও চাপের মুখেও দলটি এখনো টিকে আছে। জনসাধারণের বড় একটি অংশই দলটিকে সমর্থন করে।
রাজনীতির এক জটিল ও চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতার দৃশ্যপটে চলে আসেন। তখন একটি বড় প্রশ্ন ছিল যে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন কিনা। ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ঐতিহাসিক গওহর আলী মন্তব্য করেছিলেন, জিয়া সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিলেও শেষ পর্যন্ত কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। ওই প্রবন্ধে তিনি বলেছিলেন, সামরিক বাহিনী মূলত চার ভাগে বিভক্ত ছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসারী ও রক্ষীবাহিনী থেকে আসা অংশ, জিয়ার অনুসারী, পাকিস্তান প্রত্যাগত অংশ ও জাসদপন্থী দল। কিন্তু সব সামলে জিয়া এক ধরনের স্থিতিশীলতা এনেছিলেন।এ রকম নানা ধারণা, প্রশ্ন, সমালোচনা, প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র সবকিছু সামলে নিয়েই প্রায় পাঁচ বছর দেশ শাসন করেছেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে দুইভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথমত, ৭০ দশকের আর দশজন সামরিক শাসকের মতোই তিনি কঠোর ও কৌশলী। প্রথম দিকে প্রতিপক্ষকে কঠোরভাবে দমন করেন। এটা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি ছিল। এর পাশাপাশি তিনি কিছু গণমুখী সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেন যা জনসাধারণকে আকৃষ্ট করেছিল। খাল খনন কর্মসূচি এর অন্যতম। ওই সময় তিনি দেড় হাজারের বেশি খাল খনন ও পুনঃখনন করেছিলেন। যার অর্থনৈতিক সুফল জনসাধারণ পেয়েছে। ১৯৭৭-৭৮ সালে খাদ্য শস্য রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদিত হয়। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া গণশিক্ষা কার্যক্রম, গ্রাম সরকার, গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনী গঠনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি জনসাধারণকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদেরও শরিকানা আছে। তৃণমূলকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন তিনি। তিনি পোশাক রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক পাঠানোরও উদ্যোগ জিয়া সরকারের আমলেই নেওয়া হয়। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি তার আমলেই শুরু হয়।
সামরিক শাসকদের খুবই সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে ক্ষমতা দখলের পরই চটকদার কিছু কর্মসূচি বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে শুরু জনসাধারণকে গণতন্ত্রের দাবি থেকে সরিয়ে রাখা। কিন্তু জিয়াউর রহমান এখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তার সময়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষেই জনসাধারণের জন্য সুফল এনেছিল। এখন দেশে বৃহৎ ওয়াটার রিজার্ভার বা পানি সংরক্ষণাগারের কথা বলা হয়। খাল খনন এই ওয়াটার রিজার্ভারেরই ৭০ দশকের রূপ।
তিনি অনেককেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাছে টানতে পেরেছিলেন। গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদের (‘বিএনপির সময় অসময়’-প্রথমা প্রকাশনী) বই থেকে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ বিভিন্ন সময় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছেন। দেশের প্রধান বাম দল সিপিবি খাল খনন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ও সচিব মহিউদ্দিন খান আলমগীরের পিএইচডির অভিসন্দর্ভ খাল খনন কর্মসূচি নিয়ে করা। ড. ইউনুসকে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি শুরু করতে সহায়তা করেছিলেন জিয়া। আইসিডিডিআরবি প্রতিষ্ঠিত হয় সেসময়।
জিয়াউর রহমানের আমলে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুঁজির পরিবর্তে বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিকাশ ঘটে। ব্র্যাক, প্রশিকাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বড় পরিসরে কাজ শুরু করে।
পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসেন জিয়া। পররাষ্ট্রনীতিতে তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি ও সার্ক গঠন। আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতকে এককভাবে মোকাবিলা করা দুষ্কর ছিল। এই অবস্থায় তিনি অন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে চেয়েছিলেন। ভারতের বিরোধিতার মুখে সার্কের উদ্যোগ নেওয়া সহজ ছিল না। আর ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে জাতিসংঘের অভিযোগ দাখিল করা ছিল অত্যন্ত সাহসিকতার বিষয়।
রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করতে পেরেছিলেন। তাঁর সময়েই বহুদলীয় রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর সময়েই ভারতে নির্বাসন থেকে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। আবার স্বাধীনতার পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামসহ বেশ কয়েক’টি ইসলামি দল সেসময়েই আবার রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়। জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা মানুষ গ্রহণ করেছিল। জাতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় তিনি রাষ্ট্রভিত্তিক জাতীয়তাবাদ নিয়ে আসেন।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ও সামরিক শাসনামলে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণত সামরিক সরকারের কোনো দল খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায় না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়। এই দলগুলো দীর্ঘদিন টিকেও থাকে না। সামরিক শাসকের বিদায়ের পর দলগুলোরও বিলুপ্তি ঘটে। নিকট অতীতে এ রকম উদাহরণ অনেক পাওয়া যাবে। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটেছে। গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ তার ‘বিএনপির সময় অসময়’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বিএনপির জন্ম স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। এই অঞ্চলের দলগুলো সাধারণত রাজপথে, আলোচনার টেবিলে ক্ষমতার মঞ্চের বাইরে থেকে তৈরি হয়েছে। বিএনপি সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা এক অরাজনৈতিক ব্যক্তি মনে করলেন তিনি রাজনীতি করবেন এবং দল গঠন করলেন।’ এবং এই দল এখনো দেশের অন্যতম বড় দল।
ক্ষমতার বলয়ে জন্ম নেওয়া একটি দল সমানতালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপিকে অনেকেই রাজনৈতিক ক্লাব বলতে পছন্দ করেন। এখানে নানা মত ও পথের দল থেকে আসা নেতারা মন্ত্রী হয়েছেন। সরকারের সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু তাঁরা দলকে ধারণ করেননি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় রাষ্ট্রপতি লে.জে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে। বিএনপির অনেক নেতা হুমড়ি খেয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে শুরু করেন। বিগত জরুরি অবস্থার সময়ও দলটির মহাসচিবসহ শতাধিক এমপি সংস্কারপন্থী হয়েছিলেন। তারপরও জিয়ার মৃত্যুর পর নেতৃত্বহীনতা ও নানা ঝক্কি-ঝামেলার পরও দলটি ভালোভাবেই টিকে গিয়েছে।
জিয়াউর রহমানকে নানাভাবে চিত্রায়িত করা হয়। বিএনপি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যেই আটকে আছে। একজন শাসকের শাসনামলে ভুল হবে না এটা অস্বাভাবিক তিনিও কিছু ভুল হয়তো করেছিলেন, ক্যু দমনের নামে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার অভিযোগ করেন জিয়াউর রহমানের সমালোচকেরা। এত সমালোচনা ও নিন্দামন্দের পরও জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপির প্রতি বড় একটি অংশের সমর্থন আছে। এর কারণ কি? এই প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর হতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দেশের অর্থনীতির ভিত গড়ে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যে পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্সের ওপর দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে, তার শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের আমলেই। ইতিহাসের আতশি কাচের নীচে ফেলে যদি জিয়াউর রহমানকে বিশ্লেষণ করা হয় তবে নেতিবাচক কাজের পাশাপাশি তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলোও বেরিয়ে আসবে। নানা অভিযোগ থাকার পরও অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিয়েই জিয়াউর রহমান সম্ভবত উতরে গিয়েছেন। তিনি সৎ ও দেশপ্রেমিক ছিলেন এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিরেখা চিনতে হলে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে উত্থানকে পাঠ করতে হবে।
রাজনীতির মানুষ না হয়েও, শেখ মুজিবের মতো ভালো বক্তা না হয়েও কীভাবে তার প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়েছিলো সেটার তালাশ করলেই আমরা অনেক প্রশ্নের জবাব পাবো।
কেন আওয়ামী লীগ এই মানুষটার শরীরে কালি লাগাতে চায় সেটার উত্তরও আমরা পেয়ে যাবো।
জিয়া ছিলেন পুর্ব বঙ্গের সামন্ত অর্থনীতির ক্যাপিটালিস্ট উত্তরণের কারিগর। জমিদার উচ্ছেদের আন্দোলন থেকে স্বাধীনতায় সংগ্রাম পর্যন্ত সকল লড়াইয়ে ক্যাপিটালিস্ট রিফর্মের যে আকাংখা বাংলাদেশে নামের জনপদের মানুষের এসপিরেশন ছিলো জিয়া তা বাস্তবে রুপ দিয়েছিলেন।রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচকে সরল বুদ্ধিতে বিবেচনা করার কারণেই মানবাধিকার লংঘনকারী খুনে রক্ষী বাহিনীকে সামরিক বাহিনী থেকে বিতাড়িত না করাটা ছিলো জিয়ার ফ্যাটাল মিসটেইক। যা তিনি নিজের জীবন দিয়ে শোধ করে গেছেন।
জিয়া যেই পনোরোই আগষ্টকে ঔন করতে চান নাই এবং আওয়ামী লীগ তার পরেও যেই পনোরোই আগষ্টের দায় পুরোটাই জিয়ার উপরে চাপায় সেটাই জিয়ার জীবনের ট্রাজেডি। জিয়া পনোরোই আগষ্টকে ঔন করলে আজ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম হতোনা।রাজনৈতিক উদারতা দেখিয়ে বাকশালকে আওয়ামী লীগ নামে পুনর্বাসিত করেছিলেন জিয়াই। আর বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করে আজ পুনর্বাসিত বাকশাল তার প্রতিদান দিচ্ছে।
''আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র করেছি। অনেকে অনেক রকম কথা বলেছে। কিন্তু আমাদেরকে এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতেই হবে।…আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা। ইউনিফাই করা। যেখানে জাতি বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।"................... "জিয়াউর রহমান"
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই কথা উনার আগে কেউ বলে নাই। এই কথা বিএনপিকে মনে রাখতে হবে। প্রতিশোধ নয় তাদের রিকন্সিলিয়েশন করতে হবে। আওয়ামী লীগ আবারো জাতির মধ্যে যেই বিভক্তি আর পারষ্পরিক ঘৃণা এনেছে সেটাকে আবারো ইউনিফাই করতে হবে। জিয়াউর রহমান সেই কারণেই বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতি নির্মানে প্রাসঙ্গিক।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম-নিশানা ও কাজ বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে খুব সাফল্যের সাথে মুছে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও ১৯৮০ সালের ১১ জুলাই অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত The Sydney Morning Herald পত্রিকায় প্রকাশিত এই খবর থেকে জানা যায়- বঙ্গোপসাগরের নীচে যে তেল/গ্যাস রয়েছে সেটা তিনি সঠিক ভাবে অনুমান করেছিলেন এবং জাপানের কারিগরি সহায়তায় সেই খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে বিদেশে রফতানির পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁকে হত্যা করার প্রায় আড়াই যুগ পর ২০০৯ সালে সেই তেল/গ্যাস ব্লকগুলো প্রায় বিনামূল্যে ইজারা দেয়া হয় বিদেশীদের কাছে। কারা সেই দেশ বিরোধী চুক্তি করে কত টাকা ঘুষ খেয়ে দেশের সম্পদ বিদেশের হাতে তুলে দিয়েছিল হয়ত একদিন তা জানা যাবে, তবে ততদিনে দেশের যা ক্ষতি হবে তা আর পূরণ হবে না। আমরা একজন চৌকস সেনাপতি পেয়েছিলাম কিন্তু তার মতো বা কাছাকাছি প্রখর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আছে এমন কোন সহচর তার ছিলোনা। এটা এই জাতির ব্যর্থতা, থাকলে আজ বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো। মহান স্বাধীনতার ঘোষক,রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, টাইগার সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের প্রধান, সফল রাষ্ট্রনায়ক, সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গনতন্ত্রেরর প্রবর্তক, ১৯ দফা কর্মসুচীর জনক, খাল খনন থিওরির প্রবর্তক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলার রাখাল রাজা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
Comments
Post a Comment