খালেদা জিয়া : মাদার অফ ডেমোক্রেসি
বাংলাদেশের সমসাময়িক (মানে আমার নিজের সময়ের) যত রাজনীতিক আছে তার মধ্যে আমি বেগম খালেদা জিয়া কে খুব পছন্দ করি।
কেন পছন্দ করি তা পরে বলতেছি .....
আগে তার সম্পর্কে তার বিরোধীদের সমালোচনা নিয়ে কিছু কথা বলি, তার কথা বলতেই তার বিরোধীরা মূলত মোটা দাগে আগে দুইটা বিষয় সামনে নিয়ে আসে
এক তার জন্মদিন পালন দুই তার শিক্ষাগত যোগ্যতা।
১৫ই আগস্ট তার জন্মদিন পালনের ব্যপারটা আমিও ভালো ভাবে দেখি না, এটা বিরোধী শিবিরকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য ১৯৯১ পরবর্তী রাজনীতিতে একটা অস্ত্র হিসেবে তার দল ব্যবহার করেছে। একটা দলের ভিতরে উদারপন্থী যেমন থাকে তেমন কট্টরপন্থী ও থাকে, জাতীয়তাবাদী দলে ১৯৯১ পরবর্তী সময়ে কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদীদের প্রভাব বেশি ছিল, থাকার সঙ্গত কারন ও ছিল। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পর থেকে ১৯৯১ সালের ২০ শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত, একজন স্বামী হারা মহিলাকে সব চেয়ে বেশী আবেগের জায়গায় স্থান দিয়ে রাজনীতির কঠিন সময়ে এই দশ বছরে তার জন্যে সবচেয়ে বেশী ত্যাগ করেছেন এই কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদীরাই। এই কট্টরপন্থীরা রাজনীতিকে যতটা না প্রাধান্য দেন তার চেয়ে অনেক বেশী প্রাধান্য দেন তাদের নেত্রীকে, তাদের কাছে রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। তাই তাদের জন্য খালেদা জিয়ার একটা আলাদা দুর্বলতা সবসময়ই দেখা যায়। আনোয়ার জাহিদ, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, তরিকুল ইসলাম সে রকমই কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা, যারা খালেদা জিয়ার প্রশ্নে কোন আপোষ এর ধার ধারেন না। সরকার গঠনের পর এরা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার খুব কাছের ছিলেন, আমি যতটুকু জানি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বিদেশ সফরের জন্য খালেদা জিয়ার ভিআইপি পাসপোর্ট করার প্রয়োজন পরে, যদিও উনার আগেরই ফাস্ট লেডি থাকা অবস্থায় ভিআইপি পাসপোর্ট ছিলো কিন্তু স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়ে যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন তখন সেনাবাহিনী তার পাসপোর্ট নিয়ে নষ্ট করে দিয়েছিলো যেন মুক্তি পেয়ে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য বিদেশে মুভ না করতে পারেন। তো এই পাসপোর্ট তৈরি করার ও ব্যক্তিগত কিছু নথি আপডেটের দায়িত্ব দেন তৎকালীন সাংবাদিক নেতা ও ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক আনোয়ার জাহিদকে, তিনিই প্রথম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করেন, আমি যতটুকু জানি তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৯ই আগস্ট অন্তত তার একাডেমিক সার্টিফিকেট ও সেটাই বলে। বেগম জিয়াকে না জানিয়ে ছয় দিন পিছিয়ে নতুন পাসপোর্ট এ জন্ম তারিখ ১৫ই অগাস্ট উল্লেখ করা হয়। যখন তিনি এটা জানতে পারলেন তখন সাথে সাথে আনোয়ার জাহিদকে ডেকে পাঠালেন জানতে চাইলেন এমনটা করার কারন...!
তখন প্রায় সকল কট্টরপন্থী নেতারা তাকে অনুরোধ করে বসলেন এটা মানার জন্য এই অস্ত্র তারা বিরোধী শিবিরের জন্য ব্যবহার করবেন, কেন ব্যবহার করবেন তারা এর পক্ষেও শক্ত যুক্তি দিলেন। ১৯৮১ পরবর্তী জিয়া পরিবারের উপর নির্যাতন জিয়াউর রহমানকে স্বৈরশাসক বলা আর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ওয়াদা দিয়ে ও তার বড়খেলাপ করে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যেয়ে আন্দোলনকে আরো তিন বছর দীর্ঘায়িত করার জন্য শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ই দায়ী ছিলো বলে তারা মনে করেন, তাই তাকে মানসিক আঘাত করার সহজ অস্ত্র বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন। তিনি সেদিন আনোয়ার জাহিদ সহ অন্যদের আর না বলতে পারেননি তাদের আবেগকে উপেক্ষা করতে পারেননি, তাই এর দায় টুকু উনাকে নিতেই হবে এবং নিয়েছেন।
যদিও ২০১৪ সালের পর থেকে তিনি আর জন্মদিন উদযাপন করেন না, ভুলটা যেভাবেই হোক তিনি যে এটা শুধরে নিয়েছেন এটাই বা কয়জন রাজনীতিক এ দেশে করেন...???
দ্বিতীয়ত: তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে তিনি তৎকালীন মেট্রিক পাশ যা বর্তমানে এসএসসির সমমানের এবং দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে তৎকালীন ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে অধ্যায়ন ও করেছিলেন। তার পর স্বামীর চাকরির জন্য তাকে দেশ ও পড়া-লেখা ছাড়তে হয়, এর পর সন্তান ও সংসার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাই পড়াশুনা আর হয়নি। তিনি তার ব্যক্তিগত ডেটাতে মেট্রিক পাশ লিখেন না তিনি লিখেন স্বশিক্ষিত। এটা তিনি তার নাগরিক পরিচয়পত্রতে ও উল্লেখ করেছেন, এটা নিয়ে বিতর্ক বা উপহাস করা আমার কাছে হীন-মানসিকতা ছাড়া কিছুই মনে হয় না। একাডেমিক শিক্ষিত আর বড় বড় ডিগ্রীওয়ালারা যা করে দেখাতে পারেননি তা তিনি করে দেখিয়েছেন একবার না বহুবার।
দুর্নীতি, পুত্র আশকারা, গ্রেনেড হামলা এই অভিযোগ গুলো যারা করেন তাদের এই অভিযোগ গুলোকে আমি পলিটিক্যাল রেটোরিক ছাড়া আর কিছুই মনে করিনা, এই দেশ কখনো এই ব্লেম-গেম এর রাজনীতি থেকে বের হতে পারেনি, এই ধরনের অভিযোগ প্রথম সারির সব নেতার উপরেই আছে।
এবার বলি কেনো তাকে আমি অন্য সবার থেকে আলাদা ভাবি এবং সম্মান করি পছন্দ করি। তিনি কিছু মানবিক ও রাজনৈতিক গুণের কারণে অন্য সবার থেকে একবারে আলাদা এবং আমার দৃষ্টিতে সবার থেকে এগিয়ে......
প্রথমত: তিনি স্বল্প ভাষী। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের অতিকথন, মিথ্যা বলা ও বেফাঁস কথা বলার ব্যপারটা যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, এ ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া একদম সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি মেপে কথা বলেন চেষ্টা করেন অথেনটিক কথা বলতে, এটা তার বিরোধীরা ও স্বীকার করেন।
দ্বিতীয়ত: তিনি দেশের প্রশ্নে আপোষহীন, কখনো অন্যায়ের সাথে সমঝোতা করেননি এখনও পর্যন্ত। তার এই আপোষহীন মনোভাবের জন্য আমি তাকে বেশী সম্মান করি, ভাবছেন তার সমর্থনে অন্ধের মতো এইসব বলতেছি! না.. আমি উনার অতীত কর্মকান্ড ও বর্তমানের আলোকেই এই কথা গুলো বলতেছি। সেই ১৯৮১ পরবর্তী স্বামী হারা গৃহবধূ থেকে দলের হাল ধরা এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে থাকা অবস্থায় ১৯৯১ পর্যন্ত দশ বছরে অনেক আপোষ প্রস্তাব পেয়েছেন কিন্তু আপোষ করেননি স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরেছেন। অন্য দিকে এই আন্দোলনে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও অন্য একজন শীর্ষ নেত্রী আপোষ করে স্বৈরাচারের অধীনে পাতানো নির্বাচনে যেয়ে স্বৈরাচারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেছিলেন। আবার ধরা যাক এক এগারোর সময় (মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দিন আমলে) শাসক গোষ্ঠী বেগম জিয়াকে আবার আপোষ প্রস্তাব দিয়েছিলো রাজনীতি ছেড়ে বিদেশ চলে যেতে তিনি এক কথা বলেছিলেন দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না, এই দেশেই থাকবেন এই দেশের মানুষের জন্যই রাজনীতি করবেন। তার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছিলেন তার দুই সন্তান গ্রেপ্তার হয়েছে নির্যাতিত হয়েছে, কিন্তু আমি দেখেছি অন্য এক জন শীর্ষ নেত্রী ওই অবৈধ সরকারের বৈধতা দিবেন বলে আপোষ করে বিদেশ চলে গেলেন। এবার আসা যাক বর্তমান সরকারের সাথে আপোষ এর ব্যাপারে, গত নির্বাচনের এক বছর আগে তিনি যখন তার পরিবারের সাথে ঈদ করতে লন্ডন যান তখনই তাকে বলা হয়েছিলো তিনি যেন দেশে না আসেন আসলে গ্রেফতার করা হবে, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে তার দলের প্রায় সব নেতাই বলেছিলেন তিনি আর দেশে ফিরবেন না। কিন্তু শাসকদের অবাক করে দিয়ে ফিরলেন তিনি, এই দেশের জনগণকে বিপদে রেখে ও বহিঃশক্তির আগ্রাসনে ফেলে তিনি কোথাও যাবেন না সাফ জানিয়ে দিলেন। পরিণতি যাই হোক তিনি লড়ে যাবেন এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। ৭২ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা তিনি আবার নির্বাচিত হলেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার শারিরীক সক্ষমতা প্রশ্ন সাপেক্ষ তার পরেও নিজের কথা না ভেবে ফিরে এসেছেন গনতন্ত্রের জন্য মানুষের জন্য। চাইলেই পারতেন বিদেশে আরামে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে কিন্তু বেছে নিয়েছেন কষ্টের পথ। তিনি সত্যিকারের আপোষহীন নেত্রী।
তৃতীয়ত: তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতীক, বহিঃশক্তির আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষার ভূমিকায় তাকে দেখা যায় বার বার। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জন্য ভৌগলিক কারণে পাকিস্তান আর কোনো হুমকি না, নানা কারণে এই ৪৮ বছরে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে আগ্রাসী ভারত, স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের কৌশলগত ও সামরিক সমর্থন দিয়েছিলো তবে তাদের অবশ্যই স্বার্থের ও বিষয় ছিলো কিছু, তার জন্য রাস্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অবশ্যই ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু তার মানে এই না যে এর জন্য ভারত আজীবন আমাদের উপর আগ্রাসন চালাবে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া এখনো আপোষহীন ভূমিকা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলন, তার জন্যই তিনি আজ কারাগারে বন্দি। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল একবার খালেদা জিয়া সম্পর্কে বলেন - আমি খালেদা জিয়াকে পছন্দ করি এই কারণে যে তিনি দেশপ্রেমিক একজন নেত্রী আর তিনি যে দেশপ্রেমিক এটার বড় প্রমাণ হচ্ছে ভারত তাকে পছন্দ করে না, তার জন্য তিনি আজ জেলে।
বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় কেবলমাত্র ভারতের সহযোগিতায় আর এই সুযোগ ব্যবহার করে ভারত দিন দিন আরো আগ্রাসী হচ্ছে বাংলাদেশের উপর। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ব্যহত হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে, বিরোধী মতের ও দলের মানুষ দিন দিন নির্যাতিত হয়েই যাচ্ছে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদের পতাকা হাতে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে জেল জুলুম মেনে নিয়ে ও তিনি অবিচল। তার শেষ পরিণতি কি হয় তা ভবিষ্যৎ বলে দিবে কিন্তু তার দেশের জনগণের প্রতি এই ত্যাগ এখনই তাকে ম্যাডাম থেকে মাদার অফ ডেমোক্রেসিতে রূপান্তরিত করেছে।
উনাকে নিয়ে এই লেখাটা লেখার কারণ হচ্ছে আজ সংবাদে দেখলাম উনি খুব অসুস্থ বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা প্রয়োজন কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তাকে সেই চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না, তার জীবন আজ হুমকির মুখে.....
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করছি, দোয়া করছি উনি যেন দ্রুত আরোগ্য লাভ করে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন জাতীয়তাবাদী কোটি কোটি সমর্থকের মাঝে।
কেন পছন্দ করি তা পরে বলতেছি .....
আগে তার সম্পর্কে তার বিরোধীদের সমালোচনা নিয়ে কিছু কথা বলি, তার কথা বলতেই তার বিরোধীরা মূলত মোটা দাগে আগে দুইটা বিষয় সামনে নিয়ে আসে
এক তার জন্মদিন পালন দুই তার শিক্ষাগত যোগ্যতা।
১৫ই আগস্ট তার জন্মদিন পালনের ব্যপারটা আমিও ভালো ভাবে দেখি না, এটা বিরোধী শিবিরকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য ১৯৯১ পরবর্তী রাজনীতিতে একটা অস্ত্র হিসেবে তার দল ব্যবহার করেছে। একটা দলের ভিতরে উদারপন্থী যেমন থাকে তেমন কট্টরপন্থী ও থাকে, জাতীয়তাবাদী দলে ১৯৯১ পরবর্তী সময়ে কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদীদের প্রভাব বেশি ছিল, থাকার সঙ্গত কারন ও ছিল। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পর থেকে ১৯৯১ সালের ২০ শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত, একজন স্বামী হারা মহিলাকে সব চেয়ে বেশী আবেগের জায়গায় স্থান দিয়ে রাজনীতির কঠিন সময়ে এই দশ বছরে তার জন্যে সবচেয়ে বেশী ত্যাগ করেছেন এই কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদীরাই। এই কট্টরপন্থীরা রাজনীতিকে যতটা না প্রাধান্য দেন তার চেয়ে অনেক বেশী প্রাধান্য দেন তাদের নেত্রীকে, তাদের কাছে রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। তাই তাদের জন্য খালেদা জিয়ার একটা আলাদা দুর্বলতা সবসময়ই দেখা যায়। আনোয়ার জাহিদ, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, তরিকুল ইসলাম সে রকমই কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা, যারা খালেদা জিয়ার প্রশ্নে কোন আপোষ এর ধার ধারেন না। সরকার গঠনের পর এরা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার খুব কাছের ছিলেন, আমি যতটুকু জানি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বিদেশ সফরের জন্য খালেদা জিয়ার ভিআইপি পাসপোর্ট করার প্রয়োজন পরে, যদিও উনার আগেরই ফাস্ট লেডি থাকা অবস্থায় ভিআইপি পাসপোর্ট ছিলো কিন্তু স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়ে যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন তখন সেনাবাহিনী তার পাসপোর্ট নিয়ে নষ্ট করে দিয়েছিলো যেন মুক্তি পেয়ে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য বিদেশে মুভ না করতে পারেন। তো এই পাসপোর্ট তৈরি করার ও ব্যক্তিগত কিছু নথি আপডেটের দায়িত্ব দেন তৎকালীন সাংবাদিক নেতা ও ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক আনোয়ার জাহিদকে, তিনিই প্রথম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করেন, আমি যতটুকু জানি তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ৯ই আগস্ট অন্তত তার একাডেমিক সার্টিফিকেট ও সেটাই বলে। বেগম জিয়াকে না জানিয়ে ছয় দিন পিছিয়ে নতুন পাসপোর্ট এ জন্ম তারিখ ১৫ই অগাস্ট উল্লেখ করা হয়। যখন তিনি এটা জানতে পারলেন তখন সাথে সাথে আনোয়ার জাহিদকে ডেকে পাঠালেন জানতে চাইলেন এমনটা করার কারন...!
তখন প্রায় সকল কট্টরপন্থী নেতারা তাকে অনুরোধ করে বসলেন এটা মানার জন্য এই অস্ত্র তারা বিরোধী শিবিরের জন্য ব্যবহার করবেন, কেন ব্যবহার করবেন তারা এর পক্ষেও শক্ত যুক্তি দিলেন। ১৯৮১ পরবর্তী জিয়া পরিবারের উপর নির্যাতন জিয়াউর রহমানকে স্বৈরশাসক বলা আর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ওয়াদা দিয়ে ও তার বড়খেলাপ করে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যেয়ে আন্দোলনকে আরো তিন বছর দীর্ঘায়িত করার জন্য শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ই দায়ী ছিলো বলে তারা মনে করেন, তাই তাকে মানসিক আঘাত করার সহজ অস্ত্র বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন। তিনি সেদিন আনোয়ার জাহিদ সহ অন্যদের আর না বলতে পারেননি তাদের আবেগকে উপেক্ষা করতে পারেননি, তাই এর দায় টুকু উনাকে নিতেই হবে এবং নিয়েছেন।
যদিও ২০১৪ সালের পর থেকে তিনি আর জন্মদিন উদযাপন করেন না, ভুলটা যেভাবেই হোক তিনি যে এটা শুধরে নিয়েছেন এটাই বা কয়জন রাজনীতিক এ দেশে করেন...???
দ্বিতীয়ত: তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে তিনি তৎকালীন মেট্রিক পাশ যা বর্তমানে এসএসসির সমমানের এবং দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে তৎকালীন ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে অধ্যায়ন ও করেছিলেন। তার পর স্বামীর চাকরির জন্য তাকে দেশ ও পড়া-লেখা ছাড়তে হয়, এর পর সন্তান ও সংসার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাই পড়াশুনা আর হয়নি। তিনি তার ব্যক্তিগত ডেটাতে মেট্রিক পাশ লিখেন না তিনি লিখেন স্বশিক্ষিত। এটা তিনি তার নাগরিক পরিচয়পত্রতে ও উল্লেখ করেছেন, এটা নিয়ে বিতর্ক বা উপহাস করা আমার কাছে হীন-মানসিকতা ছাড়া কিছুই মনে হয় না। একাডেমিক শিক্ষিত আর বড় বড় ডিগ্রীওয়ালারা যা করে দেখাতে পারেননি তা তিনি করে দেখিয়েছেন একবার না বহুবার।
দুর্নীতি, পুত্র আশকারা, গ্রেনেড হামলা এই অভিযোগ গুলো যারা করেন তাদের এই অভিযোগ গুলোকে আমি পলিটিক্যাল রেটোরিক ছাড়া আর কিছুই মনে করিনা, এই দেশ কখনো এই ব্লেম-গেম এর রাজনীতি থেকে বের হতে পারেনি, এই ধরনের অভিযোগ প্রথম সারির সব নেতার উপরেই আছে।
এবার বলি কেনো তাকে আমি অন্য সবার থেকে আলাদা ভাবি এবং সম্মান করি পছন্দ করি। তিনি কিছু মানবিক ও রাজনৈতিক গুণের কারণে অন্য সবার থেকে একবারে আলাদা এবং আমার দৃষ্টিতে সবার থেকে এগিয়ে......
প্রথমত: তিনি স্বল্প ভাষী। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের অতিকথন, মিথ্যা বলা ও বেফাঁস কথা বলার ব্যপারটা যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, এ ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া একদম সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি মেপে কথা বলেন চেষ্টা করেন অথেনটিক কথা বলতে, এটা তার বিরোধীরা ও স্বীকার করেন।
দ্বিতীয়ত: তিনি দেশের প্রশ্নে আপোষহীন, কখনো অন্যায়ের সাথে সমঝোতা করেননি এখনও পর্যন্ত। তার এই আপোষহীন মনোভাবের জন্য আমি তাকে বেশী সম্মান করি, ভাবছেন তার সমর্থনে অন্ধের মতো এইসব বলতেছি! না.. আমি উনার অতীত কর্মকান্ড ও বর্তমানের আলোকেই এই কথা গুলো বলতেছি। সেই ১৯৮১ পরবর্তী স্বামী হারা গৃহবধূ থেকে দলের হাল ধরা এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে থাকা অবস্থায় ১৯৯১ পর্যন্ত দশ বছরে অনেক আপোষ প্রস্তাব পেয়েছেন কিন্তু আপোষ করেননি স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরেছেন। অন্য দিকে এই আন্দোলনে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও অন্য একজন শীর্ষ নেত্রী আপোষ করে স্বৈরাচারের অধীনে পাতানো নির্বাচনে যেয়ে স্বৈরাচারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেছিলেন। আবার ধরা যাক এক এগারোর সময় (মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দিন আমলে) শাসক গোষ্ঠী বেগম জিয়াকে আবার আপোষ প্রস্তাব দিয়েছিলো রাজনীতি ছেড়ে বিদেশ চলে যেতে তিনি এক কথা বলেছিলেন দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না, এই দেশেই থাকবেন এই দেশের মানুষের জন্যই রাজনীতি করবেন। তার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছিলেন তার দুই সন্তান গ্রেপ্তার হয়েছে নির্যাতিত হয়েছে, কিন্তু আমি দেখেছি অন্য এক জন শীর্ষ নেত্রী ওই অবৈধ সরকারের বৈধতা দিবেন বলে আপোষ করে বিদেশ চলে গেলেন। এবার আসা যাক বর্তমান সরকারের সাথে আপোষ এর ব্যাপারে, গত নির্বাচনের এক বছর আগে তিনি যখন তার পরিবারের সাথে ঈদ করতে লন্ডন যান তখনই তাকে বলা হয়েছিলো তিনি যেন দেশে না আসেন আসলে গ্রেফতার করা হবে, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে তার দলের প্রায় সব নেতাই বলেছিলেন তিনি আর দেশে ফিরবেন না। কিন্তু শাসকদের অবাক করে দিয়ে ফিরলেন তিনি, এই দেশের জনগণকে বিপদে রেখে ও বহিঃশক্তির আগ্রাসনে ফেলে তিনি কোথাও যাবেন না সাফ জানিয়ে দিলেন। পরিণতি যাই হোক তিনি লড়ে যাবেন এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। ৭২ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা তিনি আবার নির্বাচিত হলেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার শারিরীক সক্ষমতা প্রশ্ন সাপেক্ষ তার পরেও নিজের কথা না ভেবে ফিরে এসেছেন গনতন্ত্রের জন্য মানুষের জন্য। চাইলেই পারতেন বিদেশে আরামে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে কিন্তু বেছে নিয়েছেন কষ্টের পথ। তিনি সত্যিকারের আপোষহীন নেত্রী।
তৃতীয়ত: তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতীক, বহিঃশক্তির আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষার ভূমিকায় তাকে দেখা যায় বার বার। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জন্য ভৌগলিক কারণে পাকিস্তান আর কোনো হুমকি না, নানা কারণে এই ৪৮ বছরে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে আগ্রাসী ভারত, স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের কৌশলগত ও সামরিক সমর্থন দিয়েছিলো তবে তাদের অবশ্যই স্বার্থের ও বিষয় ছিলো কিছু, তার জন্য রাস্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অবশ্যই ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু তার মানে এই না যে এর জন্য ভারত আজীবন আমাদের উপর আগ্রাসন চালাবে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া এখনো আপোষহীন ভূমিকা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলন, তার জন্যই তিনি আজ কারাগারে বন্দি। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল একবার খালেদা জিয়া সম্পর্কে বলেন - আমি খালেদা জিয়াকে পছন্দ করি এই কারণে যে তিনি দেশপ্রেমিক একজন নেত্রী আর তিনি যে দেশপ্রেমিক এটার বড় প্রমাণ হচ্ছে ভারত তাকে পছন্দ করে না, তার জন্য তিনি আজ জেলে।
বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় কেবলমাত্র ভারতের সহযোগিতায় আর এই সুযোগ ব্যবহার করে ভারত দিন দিন আরো আগ্রাসী হচ্ছে বাংলাদেশের উপর। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ব্যহত হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে, বিরোধী মতের ও দলের মানুষ দিন দিন নির্যাতিত হয়েই যাচ্ছে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদের পতাকা হাতে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে জেল জুলুম মেনে নিয়ে ও তিনি অবিচল। তার শেষ পরিণতি কি হয় তা ভবিষ্যৎ বলে দিবে কিন্তু তার দেশের জনগণের প্রতি এই ত্যাগ এখনই তাকে ম্যাডাম থেকে মাদার অফ ডেমোক্রেসিতে রূপান্তরিত করেছে।
উনাকে নিয়ে এই লেখাটা লেখার কারণ হচ্ছে আজ সংবাদে দেখলাম উনি খুব অসুস্থ বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা প্রয়োজন কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তাকে সেই চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না, তার জীবন আজ হুমকির মুখে.....
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করছি, দোয়া করছি উনি যেন দ্রুত আরোগ্য লাভ করে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন জাতীয়তাবাদী কোটি কোটি সমর্থকের মাঝে।








Comments
Post a Comment